ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি-অগ্রগতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি ও ভালোবাসার মাধ্যমে একটি সুস্থ ও আলোকিত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। আর এই সামাজিক বন্ধনের মূল হলো ভালো ও সত্কর্মে পারস্পরিক সহযোগিতা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সত্কর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো।
পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) লেখেন, ‘এখানে সব সৃষ্ট জীবের প্রতি সৎ কাজে সাহায্য করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা একে অপরের সাহায্য করো, আল্লাহ যে বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে একে অন্যকে উৎসাহিত করো এবং সবাই মিলে সেই আদেশ পালন করো। আর যে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তা থেকে নিজেও বিরত থাকো, অপরকেও বিরত রাখো।’
ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন, মুমিনদের পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি এ হাদিসে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এটাই হলো উত্তম চরিত্রের পরিচয়।
ইমাম ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এ হাদিসের অর্থ হলো আখিরাতের আমলে ও দুনিয়ার বৈধ কাজে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা। ইবনে উসাইমান (রহ.) বলেন, সব মুসলিম উম্মাহ একটি সম্প্রদায়।
প্রত্যেক মানুষের জন্য এই বিশ্বাস রাখা জরুরি যে সে তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে কোনো নির্মীয়মাণ বস্তুর ইটগুলোর মতো জড়িত। যেমন—হিজরতের সফরে নবীজির সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক সঙ্গী ও বন্ধু হিসেবে ছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)। আর আলী (রা.) মক্কা থেকে নবীজির রক্ষিত আমানত তাঁর মালিকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে এই সহযোগিতার অংশীদার ছিলেন। এমনকি তিনি নবীজির ঘরে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থেকে মুশরিকদের তাঁদের পিছু নেওয়া থেকে অমনোযোগী রেখে নবীজি (সা.)-এর প্রাণ রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ইরকিত (রা.) পথ দেখিয়ে, আসমা ও আয়েশা (রা.) খাবার প্রস্তুত করে দিয়ে, আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) চারদিকের খবরাখবর আনতেন এবং কাফিরদের কাছ থেকে তাঁদের ঠিকানা গোপন করার জন্য আমর ইবনে ফুহায়রা (রা.) বকরি চড়িয়ে তার পদচিহ্ন মুছে হিজরতের এই স্মরণীয় ঘটনাকে সফল হতে সাহায্য করেছেন।
এমনকি নবী (সা.)-ও সামাজিক এসব কাজে নিজের শরিক থেকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা। বারা (রা.) বলেন, আহজাব (খন্দক) যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিখা খনন করেছেন। আমি তাঁকে খন্দকের মাটি বহন করতে দেখেছি। এমনকি ধুলাবালি পড়ার কারণে তাঁর পেটের চামড়া ঢেকে গিয়েছিল। তিনি অধিকতর পশমবিশিষ্ট ছিলেন। সে সময় আমি নবী (সা.)-কে মাটি বহনরত অবস্থায় ইবনু রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেও শুনেছি। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি যদি হিদায়াত না করতেন তাহলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, আমরা সদকা করতাম না এবং আমরা সালাতও আদায় করতাম না। সুতরাং আমাদের প্রতি আপনার শান্তি অবতীর্ণ করুন এবং দুশমনের সম্মুখীন হওয়ার সময় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন।
অবশ্য মক্কাবাসীরাই আমাদের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছে। তারা ফিতনা বিস্তার করতে চাইলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। বর্ণনাকারী (বারাআ) বলেন, শেষের কথাগুলো তিনি টেনে আবৃত্তি করছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪১০৬)
তবে ভালো ও সৎ কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি লক্ষ রাখতে হবে সামাজিক রীতিনীতি পালন করতে গিয়ে যেন পরস্পর পাপের কাজে লিপ্ত না হয়ে যায়। কারণ এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
তাই আসুন পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে দেশ ও সমাজ রক্ষায় একে অপরের সহযোগী হই। তবেই সমাজে শান্তি-ভালোবাসা ও সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের একে অন্যের সহযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন।
আপনার মতামত লিখুন :