হিজলায় বালুমহল ঘিরে ফের উত্তেজনা, নদীভাঙনের শঙ্কায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান


Dailybulletin প্রকাশের সময় : মে ৯, ২০২৫, ১:৪৫ অপরাহ্ণ /
হিজলায় বালুমহল ঘিরে ফের উত্তেজনা, নদীভাঙনের শঙ্কায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

দুলাল সরদার , হিজলা (বরিশাল) || শুক্রবার (৯ মে) বরিশালের হিজলা উপজেলার শাওরা সৈয়দখালী এলাকায় মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি ও স্মারকিপি প্রদান করেছেন স্থানীয়রা। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারো সামনে এসেছে নদীভাঙন, সাধারণ জেলেদের জীবিকা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ।

বিকেল ৩টায় হিজলা নদী ও ভূমি রক্ষা কমিটি আয়োজিত মানববন্ধনটি উপজেলার খুন্না বন্দর ও জেলা পরিষদ ডাকবাংলো সংলগ্ন হিজলা-মুলাদী’র প্রধান সড়কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে স্থানীয় জনগণ “নদী বাঁচাও, হিজলা বাঁচাও”, “বালু উত্তোলন বন্ধ কর” প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে গোটা এলাকা।

এসময়ে উপস্থিত ছিলেন ৫২ ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও হিজলা নদী ও ভুমি রক্ষা কমিটির আহবায়ক নায়েব আবদুল কুদ্দুস, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, জেলে, নারী, শিশু, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
তাদের দাবীতে উঠে এসেছে জেলেদের সংকট। এই অঞ্চলের প্রধান জীবিকা মৎস্য আহরণ। স্থানীয় জেলে মজিবর মাঝি বলেন,নদীতে ড্রেজার চললে মাছ পাইনা। তারপরও যদি জাল ফেলি তাইলে বালু নিতে আসা বলগেট (বাল্কহেড, Bulkhead) জাল ছিড়ে নিয়ে যায়। কিছু বলতে গেলে হুমকি ধামকি দিয়া কয় জাল পাতছস ক্যা?তাই এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি।বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধনে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন খুন্না বাজারে।

মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কন্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন,“নদীর ভাঙনে একাধিকবার বসতভিটা হারিয়েছি। এবার যেভাবে বালু তোলা শুরু হয়েছে তাতে গোটা ইউনিয়নটাই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাওড়া সৈয়দখালী পয়েন্টে বালুমহল ইজারা’র জন্যে নির্ধারিত স্থানটিতে বালু উত্তোলন না করে তার আশপাশের মৌজায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং প্রতিদিন স্থান পরিবর্তন করছে তারা । অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডারে প্রতিপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বেকায়দায় ফেলে আর বি এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানটি ইজারা বাগিয়ে নেয়। সরকারি কোন কর্মকর্তা নিয়মিত স্পটে না থাকার কারণে ইজারা পাওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক স্পটে বালু তুলছে এই প্রতিষ্ঠানটি।নদীর গতি প্রকৃতি, স্রোতের দিক, পাড় রক্ষা প্রকল্প – কিছুই বিবেচনায় নিচ্ছে না তারা।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস শিকদার বলেন,জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত নিয়মেই বালুমহল ইজারা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, বড় কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই বালু মহলটির ইজারা বাতিল করে নদীর পাড়ে রিভেটমেন্ট নির্মাণ ও জিওব্যাগ স্থাপন করা হোক। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনে সরকারি উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবী জানান তারা।

মানববন্ধন শেষে নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তিনি আশ্বাস দেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে, জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শাওরা সৈয়দখালীতে বালু উত্তোলন কেবল প্রকৃতি নয়, স্থানীয় জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রশাসন, ঠিকাদার ও জনগণের ত্রিমুখী সমঝোতার মাধ্যমে টেকসই সমাধান খোঁজা এখন সময়ের দাবি।

error: Content is protected !!